December 22, 2024, 4:19 pm
আব্দুল আউয়াল
বানারীপাড়া(বরিশাল)প্রতিনিধি:
একুশে পদক প্রাপ্ত সমকাল ও যুগান্তরের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক প্রয়াত গোলাম সারওয়ারের চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বানারীপাড়ায় বিভিন্ন স্থানে দোয়া মোনাজাতের আয়োজন করা হয়। এ উপলক্ষে বানারীপাড়ার বেগম ফজিলাতুন্নেছা এতিমখানা ও বানারীপাড়া এতিমখানায় কোরানখানী ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। দোয়া মোনাজাত শেষে ওই দুই এতিমখানায় এতিমদের মাঝে দুপুরের খাবারের ব্যবস্থা করা হয়। বেগম ফজিলাতুন্নেছা এতিমখানায় মাওলানা আমজাদ হোসাইন ও বানারীপাড়া এতিমখানায় পরিচালক মাওলানা আব্দুস সালাম মোনাজাত পরিচালনা করেন। দোয়ায় অংশ নেন গোলাম সারওয়ারের মেঝ ভাই বানারীপাড়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি গোলাম সালেহ মঞ্জু মোল্লা, বানারীপাড়া এম এ লতিফ বহুমুখী আলিম মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা মাহামুদুল হাসান,আব্দুল বাসেত, হাফেজ রাকিব হোসেন, সমকাল প্রতিনিধি মো. নজরুল ইসলাম, মহসীন আকন নান্টু, গোলাম সারওয়ারের ভাতিজা গোলাম কিবরিয়া সৈকত, গোলাম মুক্তাদীর শাওন, সাংবাদিক আব্দুল আউয়াল, উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম সম্পাদক মো. মেহেদী হাসান উজ্জল, মো, হারুন অর রশিদ, মো. মিন্টু প্রমুখ। রাতে বানারীপাড়া হাইস্কুল জামে মসজিদে দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। প্রসঙ্গত গোলাম সারওয়ার ১৩ আগস্ট ২০১৮ সালের এই দিনে ৭৫ বছর বয়সে সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন ।গোলাম সারওয়ার ষাটের দশকে সাংবাদিকতাকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করেন। তখন থেকে টানা পাঁচ দশকের বেশি সময় তিনি এ পেশায় মেধা, যুক্তিবোধ, পেশাদারিত্ব, দায়িত্বশীলতা, অসাম্প্রদায়িক চিন্তা-চেতনার নিরবচ্ছিন্ন চর্চার মাধ্যমে নিজেকে এবং বাংলাদেশের সংবাদপত্রকে অনন্য উচ্চতায় প্রতিষ্ঠিত করেন। মরহুম গোলাম কুদ্দুস মোল্লা ও মরহুম সিতারা বেগমের জ্যেষ্ঠ সন্তান গোলাম সারওয়ার বাংলাদেশের মুক্তচিন্তা, প্রগতিশীল মূল্যবোধ আর মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষে আজীবন সোচ্চার ছিলেন।
দেশের সাংবাদিকতায় প্রতিষ্ঠানতুল্য ব্যক্তিত্ব গোলাম সারওয়ার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ থেকে স্নাতক সম্মানসহ এমএ ডিগ্রি অর্জন করেন। ঢাবিতে ছাত্র অবস্থায় ১৯৬২ সালে চট্টগ্রামের দৈনিক আজাদীর বিশ্ববিদ্যালয় সংবাদদাতা হিসেবে সাংবাদিকতা পেশায় তাঁর অভিষেক। একই বছর দৈনিক সংবাদের সহ-সম্পাদক হিসেবে যোগ দেন তিনি। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পর্যন্ত সংবাদে কর্মরত ছিলেন। এরপর মহান মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। মুক্তিযুদ্ধে তিনি নিজ এলাকা বরিশালের বানারীপাড়ায় সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন।মুক্তিযুদ্ধের পর কয়েক মাস বানারীপাড়া ইউনিয়ন ইনস্টিটিউশনে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭২ সালে দৈনিক ইত্তেফাকে জ্যেষ্ঠ সহ-সম্পাদক হিসেবে যুক্ত হন। ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত যথাক্রমে প্রধান সহ-সম্পাদক, যুগ্ম বার্তা সম্পাদক ও বার্তা সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। গোলাম সারওয়ার দৈনিক যুগান্তরেরও প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক।দেশের দৈনিক সংবাদপত্রগুলোর সম্পাদকদের প্রভাবশালী সংগঠন বাংলাদেশ সম্পাদক পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন গোলাম সারওয়ার। মেধা, নিষ্ঠা ও দক্ষতায় উৎকর্ষের কারণে গোলাম সারওয়ারকে অনেকেই ‘সাংবাদিকদের শিক্ষক’ হিসেবে অভিহিত করেন। তিনি ছিলেন এ দেশের সংবাদপত্রে সাফল্য ও পেশাদারিত্বের প্রতীক।
সৃজনশীল সাহিত্যেও ছিল তাঁর সাবলীল বিচরণ। তিনি ছিলেন একজন দক্ষ ছড়াকার। তাঁর লেখা বইয়ের মধ্যে রঙিন বেলুন, সম্পাদকের জবানবন্দি, অমিয় গরল, আমার যত কথা এবং স্বপ্ন বেঁচে থাক উল্লেখযোগ্য।
সাংবাদিকতায় অনন্য ভূমিকার জন্য ২০১৪ সালে একুশে পদক, ২০১৬ সালে কালচারাল জার্নালিস্টস ফোরাম অব বাংলাদেশের (সিজেএফবি) আজীবন সম্মাননা ও ২০১৭ সালে আতাউস সামাদ স্মারক ট্রাস্ট আজীবন সম্মাননা লাভ করেন তিনি।